২০১১ সালের জানুয়ারি মাসের শুরুর দিকে খানিক টা হঠাৎ করেই ঠিক করি যে দিন সাতেক এর জন্য বেড়াতে যাব। উত্তরবঙ্গ যেতে ইচ্ছে করছিল না, তবে হিমালয়ে যাবারই ইচ্ছে ছিল ষোল আনা। তাই সব মিলিয়ে গাড়োয়াল যাব ঠিক হল। সত্যি কথা বলতে কি কলকাতা থেকে বেড়িয়ে গাড়োয়াল ঘোরার জন্য সাত দিন বেশ কম সময়, কিন্ত সেই মুহূর্তে তার থেকে বেশী সময় আমার কাছে ছিল না। তাই ঠিক করলাম এবার মাত্র দুটো জায়গা তেই ঘুরব, দেওরিয়া তাল আর আউলি। বেরোলাম জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে।
প্রথমে কলকাতা থেকে হরিদ্বার, সেখানে এক রাত থেকে পরদিন সকালে একটা গাড়ি নিয়ে সোজা উখিমঠ। সারাদিন লেগে যায় হরিদ্বার থেকে উখিমঠ পৌছাতে। তবে রাস্তা টা বেশ উপভোগ্য। মাঝে মাঝে একটু দাঁড়িয়ে, ছবি তুলে, চা-টা খেয়ে দিব্যি চলে যাওয়া যায়। আমরা সকাল নটায় হরিদ্বার থেকে বেড়িয়ে, উখিমঠ পৌছালাম প্রায় বিকেল পাঁচটা, মানে তখন সন্ধে হব হব আর উখিমঠে গাড়োয়াল নিগমের ঘরের সামনের ছোট্ট ফালি বাগানটায় দাঁড়িয়ে সামনে তাকালেই দেখা যাচ্ছে কেদারনাথের ওপর সূর্যাস্ত। সেই সোণালী, রুপালী, কমলা আরো হাজার রঙের খেলা, বহু বার দেখেও যা কোন দিনও পুরান হবার নয়, যা দেখার জন্য বারবার হিমালয়ে ছুটে আসা।
গাড়োয়ালে ঘোরার জন্য জানুয়ারি মাস মোটেও আদর্শ সময় নয়। ঠান্ডার দিক থেকে হয়ত খুব অসুবিধে হয় না, বিশেষত যাদের পাহাড়ে ঘুরে বেড়াবার অভ্যেস আছে, কিন্ত পরিস্কার আকাশ না পাবার সম্ভাবনা প্রবল। Western Disturbance এর জন্য মেঘলা আকাশ, সারাদিন কুয়াশা, স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ হবারই কথা বেশীর ভাগ সময়। আবার এই Western Disturbance ঠিক পরেই সপ্তাহ দুয়েক এর একটা weather window তৈরি হয় এবং সেই সময়টুকু খুব ভাল আবহাওয়া পাওয়া যায়। কিন্ত একটু এদিক-ওদিক হলেই গন্ডগোল। তবে এই বার অন্তত আমাদের সেই গন্ডগোলের ফল ভোগ করতে হয় নি। আর হিসেব মিলে যাবার জন্য শুধু ভালো আবহাওয়াই নয়, অপ্রত্যাশিত ভাবে বরফে ঢাকা পেয়েছি বেশ কিছু যায়গা, যেটা বেড়ান টাকে একটা অন্য মাত্রা দিয়েছে।
সারি গ্রামে প্রাতরাশ সেরে আমরা রওনা দিলাম দেওরিয়া তালের উদ্দেশ্যে। গন্তব্যে পৌছালাম প্রায় দশটা নাগাত। একটাই রাস্তা, চড়াই ভেঙে উঠে গেছে একে-বেকে। চলতে চলতে মাঝে মাঝে বাঁ দিকে তাকালে নিচে দেখা যাবে ফেলে আসা সারি গ্রাম আর আন্দাজ পাওয়া যাবে কতটা চড়াই ভাঙা হল। এরকম চলতে চলতে যখন মনে হবে যে আর কত দূর, ঠিক তখনই রাস্তা টা হঠাৎ ই ডান দিকে ঘুরে হাল্কা নামতে শুরু করবে। আর তার কয়েক সেকেন্ড বাদেই চোখের সামনে খুলে যাবে সম্পূর্ণ অন্য এক জগৎ।
স্বাবাভিক ভাবেই নামতে আরো কম সময় লাগল। কিন্ত বেশ বুঝতে পারলাম যে কয়েক ঘন্টা ওপরে কাটিয়ে এলাম তার রেশ সহজে কাটবার নয়। যারা আমায় জায়গাটার কথা বলেছিল, এই জায়গাটার আইডিয়া দিয়েছিল, তাদের প্রত্যেক কে ধন্যবাদ দিতে দিতে নিচে নেমে এলাম। আর মনে মনে ঠিক করলাম আবার আসতে হবে, আবার….
দেওরিয়া তাল যাবার জন্য সারি গ্রাম থেকে হাঁটতে হয়। তিন কিলোমিটার হাঁটা পথ আর পুরো রাস্তা টাই চড়াই হলেও ঢাল খুবই কম । অক্টোবর মাসে আবহাওয়া ভাল পাবার সম্ভাবনা সব থেকে বেশী। সাধারনত আগের দিন উখিমঠ গিয়ে থাকাটাই রীতি, তাতে পরদিন সকাল সকাল দেওরিয়া তাল পৌছান যায়।
- কলকাতা থেকে হরিদ্বার। সরাসরি গেলে উপাসনা এক্সপ্রেস বা কুম্ভ এক্সপ্রেস, কোন দিন যাত্রা শুরু তার ওপর। অথবা দিল্লী হয়ে বাসে
- হরিদ্বার এ একদিন থেকে পরদিন উখিমঠ। সঙ্গে গাড়ি থাকলেই ভাল, তাহলে ঘন্টা সাতেক এ পৌছান যাবে। বাসে গেলে আরো দু-তিন ঘন্টা বেশী ধরে রাখা ভাল
- কিছু প্রাইভেট হোটেল থাকলেও গাড়োয়াল নিগম এর লজ্ ই সব থেকে ভাল
- সকালে গাড়ি নিয়ে সারি গ্রাম পৌছাতে আধ ঘন্টা, দূরত্ব পনের কিলোমিটার
- সারি গ্রামে সকালের জলখাবার খেয়ে যাত্রা শুরু
- দেওরিয়া তালে ও কিছু ছোট খাবার এর দোকান আছে ডাল-ভাত পাওয়া যায়
- তাঁবু সঙ্গে নিয়ে গেলে দেওরিয়া তালে রাত কাটান যেতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রে বড় দলে যাওয়া টা জরুরি। রাতে খাবারের গন্ধে বন্য প্রাণী আসতে পারে
- রাতে থাকার পরিকল্পনা থাকলে নিচে দেওয়া নম্বর গুলি তে আগে থেকে ফোন করে কথা বলে নিলে সুবিধে হবে
- মুরলি সিং নেগি, রাকেশ সিং নেগি অথবা উমেন্দ্র সিং নেগি
- ০৯৪১১ ৫৩৪৭১৫, ০৯৪৫৬ ৫৩৪০৬২, ০৯৪৫৮ ৪৯১৪৮৮ অথবা ০১৩৬৪ ২১৪০৯৩